SATT ACADEMY

New to Satt Academy? Create an account


or

Log in with Google Account

নবম-দশম শ্রেণি (মাধ্যমিক) - গার্হস্থ্য বিজ্ঞান - শিশুর বিকাশ ও পারিবারিক পরিবেশ | NCTB BOOK

অনেক শিশুবিজ্ঞানী জন্মের মুহূর্তে শিশুকে সাদা কাগজের সাথে তুলনা করেছেন। সাদা কাগজে যেভাবে একটি ছবি আঁকা হয় ছবিটি সেভাবেই রূপ লাভ করে। ঠিক তেমনি নবজাত শিশুর জীবনে কোনো অভিজ্ঞতা থাকে না। সে তার চারপাশের পরিবেশ থেকে যে ধরনের অভিজ্ঞতা পায় সেভাবেই আচরণ করতে শেখে। সুষ্ঠু পরিচালনার মাধ্যমে যেমন একটি শিশুকে উপযুক্তভাবে গড়ে তোলা যায় ঠিক তেমনি সঠিক তত্ত্বাবধানের অভাবে শিশুর মধ্যে অনেক ধরনের আচরণগত সমস্যা তৈরি হতে পারে যা তার বর্তমান বিকাশকে এবং পরবর্তী বিকাশকে বাধাগ্রস্ত করে। শিশুরা কাদা মাটির মতো। সঠিক পরিচালনার মাধ্যমে শিশুটিকে মনমতো ছাঁচে গড়ে তোলা যায়, শিশুর সামর্থ্য বাড়ানো যায়। সেজন্যে শিশু পরিচালনার নীতি আমাদের জানা জরুরি।

শিশু পরিচালনার উল্লেখযোগ্য কয়েকটি নীতি -

  • শিশুর সামনে আদর্শ আচরণ উপস্থাপন- শিশুরা অনুকরণ করে। যারা তাদের কাছাকাছি থাকে তাদের আচরণ অনুকরণ করে। শিশুদের যা যা করতে বলা হয় বা যা যা করতে নিষেধ করা হয় তার চেয়ে পরিবারের বড় সদস্যরা যা যা করেন, সেগুলোই তারা অনুকরণ করে। এ কারণে শিশুর সামনে ভালো আচরণ উপস্থাপন করা দরকার। কোনো আচরণ শেখাতে হলে বড়দের সেই আচরণে অভ্যস্ত হতে হয়। যেমন- বড়দের শ্রদ্ধা করা, একে অন্যকে সাহায্য করা ইত্যাদি। আবার কোনো আচরণ করতে নিষেধ করা হলে বড়দেরও সেই আচরণ থেকে বিরত থাকতে হবে। যেমন- মিথ্যা কথা না বলা, ঝগড়া না করা ইত্যাদি।
  • শিশুকে প্রশংসা করা- প্রশংসা শিশুদের ক্ষমতাকে বাড়ায়, সাফল্যের অভিজ্ঞতা দেয়। কীভাবে অন্যদের প্রশংসা করতে হয় তা শেখায়। শিশুর কাজের ভালো দিকগুলো যদি তুলে ধরা হয় তবে তার আত্মবিশ্বাস বাড়ে। নিজ সম্পর্কে তার ভালো ধারণা হয়। সে বুঝতে পারে যে, সে অনেক কিছু করার ক্ষমতা রাখে শিশুর মধ্যে ভালো গুণাবলী খুঁজে তার জন্য তাকে প্রশংসা করতে হবে। এই প্রশংসা তার কাজের সাথে সম্পর্কিত হতে হবে। প্রত্যেক শিশুর মধ্যেই কোনো না কোনো ভালো গুণ বা আচরণ পাওয়া যায়। এই ভালো গুণ বা আচরণকে প্রশংসা করা হলে শিশু ভালো কাজগুলো বারবার করে। সে বুঝতে পারে যে কী কী পারে এবং তার মধ্যে কী কী গুণ আছে।
  • শিশুকে শাস্তি না দেওয়া- শিশুর কাজের জন্য শাস্তি দিলে তা শিশুর উপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে। শাস্তি দুই ধরনের হয়শারীরিক শাস্তি মানসিক শাস্তি। শারীরিকভাবে আঘাত করা, মারা, খেতে না দেওয়া ইত্যাদি শারীরিক শাস্তি। মানসিক শাস্তি হলোশিশুকে নিয়ে খারাপ মন্তব্য করা, বকাবকি করা, দোষারোপ করা, মনোযোগ না দেওয়া, লজ্জা দেওয়া, ঘরে বন্দী করে রাখা ইত্যাদি। শিশুকে যে কোনো ধরনের শাস্তি দেওয়া হোক না কেন তা শিশুর আত্মবিশ্বাস কমায়, শিশু ভীত এবং লাজুক হয়ে বেড়ে উঠে। অনেক সময় বোঝাই যায় না যে, শিশুর প্রতি যে আচরণটি করা হচ্ছে, সেটা তার জন্য মানসিক শাস্তিস্বরূপ কি না। মানসিক শাস্তিতে শিশুর পরবর্তী জীবনেও খারাপ প্রভাব পড়ে। শিশুর কোনো আচরণ সংশোধনের প্রয়োজন হলে ওই নির্দিষ্ট আচরণ সম্পর্কে তাকে সতর্ক করতে হবে। আচরণটি কেন খারাপ, ওই আচরণের খারাপ ফলাফল তাকে বুঝিয়ে দেওয়া প্রয়োজন
  • শিশুর জন্য হ্যাঁ বলা অনেকে মনে করেন শিশুকে হ্যাঁ বলা অর্থ সে যে সকল কাজ করতে চায় বা যা কিছু চায় সব কিছু করার অনুমতি দেওয়া বা তাকে সব কিছু দেওয়া। কিন্তু এটি সম্পূর্ণ ভুল ধারণা। শিশুকে হ্যাঁ বলা অর্থ শিশুকে ইতিবাচকভাবে পরিচালনা করা। শিশুদের প্রতি যে কোনো আদেশ অথবা নির্দেশ সব সময় ইতিবাচকভাবে বলা। নেতিবাচকভাবে নির্দেশ না দেওয়া। আমরা সব সময়ই শিশু সম্পর্কে নেতিবাচক মন্তব্য করি বা নির্দেশ দিয়ে থাকি। যেমন- এটা করো না, ওটা ধরো না, তোমাকে দিয়ে কিছু হবে না ইত্যাদি। এই নির্দেশগুলোকে হ্যাঁ বোধকভাবে প্রকাশ করতে হবে। নিচে ইতিবাচকভাবে কথা বলার কয়েকটি উদাহরণ দেওয়া হলো-

. ‘টেবিলে কাঠের টুকরা রেখ না' না বলে বলতে হবেকাঠের টুকরাগুলো মাটিতে রাখ।

. এখন খেলার সময় নয়না বলে বলতে হবেএখন খেয়ে নাও পরে খেলবে'

. মুখ ধুতে এত বেশি সময় নষ্ট করো না- না বলে বলতে হবেতাড়াতাড়ি মুখ ধুয়ে নাও'

       ৪. তোমাকে দিয়ে কিছু হবে না- না বলে বলতে হবেচেষ্টা করলেই তুমি পারবে'

ইতিবাচক নির্দেশ নেতিবাচক নির্দেশ অপেক্ষা কম প্রতিবাদ আনে, এতে কাজ ভালো হয়। বড়দের                                                            ইতিবাচক উক্তি, মন্তব্য শিশুকে নিজের প্রতি আস্থাশীল করে তোলে। সে সফল হওয়ার চেষ্টা চালায়। তাকে          কাজ করতে উৎসাহিত করে।

  • শিশুর সাথে ভাব বিনিময়- শিশুর সাথে কথা বলার সময় গলার স্বর আস্তে নরম এবং ভাষা সহজ হতে হয়। জোড়ে কর্কশ স্বরে কথা বললে শিশু ভয় পায়, তাকে এড়িয়ে চলে। শিশুর সাথে কথা বলার সময় শিশুর মনের ভাব বুঝতে চোখে চোখ রেখে বন্ধুর মতো কথা বলতে হয়। তাহলে শিশুকে বোঝা সহজ হয়। শিশুর সাথে কথা বলতে একজন ভালো শ্রোতা হতে হয়। যেমন- মনোযোগ দিয়ে তার কথা শোনা, কথার মাঝে বাধা না দেওয়া, ভালোভাবে বোঝার জন্য প্রশ্ন করা ইত্যাদি

 

  • শিশুর জন্য আদর্শ পরিবেশ তৈরি শিশু পরিচালনার অন্যতম একটি দিক হলো শিশুকে উপযুক্ত পরিবেশ - দেওয়া। উপযুক্ত পরিবেশ পেলে শিশু কম বিরক্ত করে এবং সে তার সময় আনন্দে কাটায়। স্কুলে যাওয়ার পূর্ব পর্যন্ত খেলাধুলাই শিশুর প্রধান কাজ। গৃহে শিশুর জন্য নিরাপদ খেলার স্থান খেলার সরঞ্জামের ব্যবস্থা থাকতে হয়। জন্য দামি খেলনা বা ব্যয়বহুল উপকরণের প্রয়োজন হয় না। স্বল্প ব্যয়ে বা বিনা মূল্যে শিশুর খেলার উপকরণের ব্যবস্থা করা যেতে পারে। যেমন- গাছের পাতা, প্লাস্টিক সামগ্রী, কাগজের বাক্স ইত্যাদি। ছাড়া শিশুদের গান, ছড়া, গল্প শোনানো, তাদের সাথে খেলা করা, তাদের নতুন কিছু দেখতে, শুনতে, ধরতে, করতে, স্বাদ গ্রহণে উৎসাহিত করার জন্য বয়সোপযোগী সঠিক সরঞ্জাম সরবরাহ সুযোগ সৃষ্টি করা প্রয়োজন

 

 

  • শিশুর মনোস্তাত্ত্বিক চাহিদা পুরণ করা- শিশু পরিচালনায় আর একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো শিশুর মনোস্তাত্ত্বিক চাহিদা পূরণ করা শিশুকে সুখী করা। প্রত্যেক শিশুর মধ্যেই মনস্তাত্ত্বিক চাহিদা থাকে যেগুলোকে ইংরেজি three A’s for happiness দিয়ে এবং বাংলায় সুখের ৩টিদিয়ে বোঝানো হয়

 

 

স্বীকৃতি A- Acceptance

- স্নেহ A- Affection

- সাফল্য A- Achievement

 

 

স্বীকৃতি- সকল শিশুর চেহারা বৈশিষ্ট্য, গুণাবলি একরকম হয় না। কেউ যদি দেখতে সুন্দর হয় তবে সকলে তাকে সাদরে গ্রহণ করে। এখানে স্বীকৃতি অর্থ শিশু যেভাবে আছে সেভাবেই তাকে গ্রহণ করা বোঝায়। শিশুটি দেখতে ভালো বা খারাপ, পঙ্গু বা স্বাভাবিক, বুদ্ধি কম বা বেশি, ছেলে বা মেয়ে যে অবস্থায় থাকুক তাকে সাদরে গ্রহণ করতে হবে। শিশুটি যেমন ঠিক তেমনভাবে তাকে গ্রহণ করা, তার গুণাবলিকে স্বীকৃতি দেওয়া সেভাবে উৎসাহ দিলে শিশু সুখী থাকে।

 

স্নেহ- প্রত্যেক শিশুর মধ্যে স্নেহ, মমতা, ভালোবাসার চাহিদা থাকে। শিশুর যত্ন, পরিচর্যা, তাকে সময় দেওয়া, কিছু শেখানো ইত্যাদি সবকিছুই যদি আদরের সাথে হয়, তাহলে শিশুর মধ্যে আস্থা নিরাপত্তার অনুভূতি আসে। তখন সে তার পরিবেশকে ভয় পায় না

 

সাফল্য- প্রত্যেক শিশু সফলতা চায়। সে কোনো কাজ পারলে খুশি হয়। জন্য শিশুর ভালো কাজ বা কাজের ভালো দিকগুলো তুলে ধরা হলে সে নিজের শক্তিশালী বৈশিষ্ট্য শনাক্ত করতে পারে বা বুঝতে পারে যে সে কি পারে। এই উৎসাহ তাকে সফলতার অভিজ্ঞতা দেয় এবং শিশুটি পরিতৃপ্ত সুখী থাকে

 

কাজ - . শিশুর বিকাশে প্রশংসা শাস্তির ফলাফলের তালিকা কর

কাজ - কয়েকটি নেতিবাচক বাক্য ইতিবাচক ভাবে রূপান্তর কর। ক্লাসে তা পড়ে শোনাও

Content added By